প্রবাল বসু
জবরদস্তি
আমার কোন নিজস্ব আবহ নেই যা দিয়ে অন্ধকার আকাশটাকে একটু আলোকিত করতে পারি। আমার কোন নিজস্ব ঘর নেই কিংবা বসার কোন জায়গা। রাঙা ধুলোর সাথে মিশে থাকি বিশেষত্বহীন।
কেন জানি না, শীতের মরশুম এলেই উদাস হয়ে যায় মন। পাকা ধানের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই রাতদিন তাদের গায়ে আদর মাখিয়ে দিই। মিষ্টি গন্ধ গোটা আকাশ ময়। তার কিছু তুলে তুলে এখানে করি লালন। এ সম্পর্ক শাশ্বত ও অম্লান, মা আর ছেলের যেমন।
তবুও এমন অনেক সম্পর্ক আছে প্রাণপণে মুছে ফেলতে চাইলেও কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। শুধু লেপটে থাকা সময়ই জানে কার বুকে কতটা ক্ষত জমে আছে। এ ক্ষতের কোন মলম হয় না, অগোচরে বেড়ে বেড়ে আকারে অসীম। তোমার কী সন্তানের মুখটাও একবার মনে পড়ে না? এমনই অমিমাংশিত অনেক কথা ওঠে, যাদের আরম্ভ আছে কিন্তু অন্তিমকাল আসে না। আসলে মেপে কথা বলা একটা আর্ট। তবুও, তবুও বসে থাকি বাসি মড়ার মত নিশ্চুপ।
একঝাঁক জোনাকি উড়ে এসে আমার দুই গালে বসে আর বুনো ফুলের ঘ্রাণ নেবে বলে চুমু খায়। অথচ, অস্তিত্বহীন বলে কোন প্রতিবাদ করতে পারি না।
বিয়োগান্ত নাটক
ভাবছি এবার থেকে নিজের কথাই লিখব।
পেঁয়াজের খোসার মত জামা খুলে খুলে কেটে যাবে বেলা।
কিন্তু শুরু থেকে শেষের দিকে যাব না কি শেষ থেকে আরম্ভে ফিরব
এ হিসেব করতে গিয়ে মাথার উপর একটি পাতা খসে পড়ে।
গঙ্গায় শুরু হয়েছে কি না ঠিক জানি না
তবে, আমার কিন্তু খর ভাটা।
তবুও লঞ্চের পিঠে চেপেই পার হতে হয় নৈহাটি থেকে চুঁচুড়া
কিংবা চুঁচুড়া থেকে নৈহাটি
কারণ, অন্য কোন উপায় এখানে প্রযোজ্য নয়।
স্থির জল তো নয়?
এদিক থেকে ওদিক ঠেলে ঠেলে বর্ধিত গতিপথ
এমনই জলের টান!
গঙ্গায় শুরু হয়েছে কি না ঠিক জানি না
তবে, আমার কিন্তু খর ভাটা।
যেন জীবনের বিকেলে এসে পুনরায় পুঁথি খুলে বসি
এক একটি পাতা দিন ও রাত্রির সমাহার
তারপর ডাউন কৃষ্ণনগর শিয়ালদা লোকাল।
জীবনযুদ্ধ
প্রতিবাদ একধরনের ঢেউ।
তার ব্যাপ্তি
আকাশের চেয়ে বড় কি না জানি না
তবে, মাঝেমাঝে জীবনকেই ছাপিয়ে যায়।
হিংসা দিয়ে কি আর দেশ চলে?
তবুও
আচমকাই ওরা আতশবাজির মতো ফেটে গেল।
নিজে অন্ধকার হয়ে
অন্যের চোখের আলো হতে চাওয়া ধৃষ্টতা ছাড়া আর কী?
যা গেল -
তা তো গেলই!
গণতন্ত্র কি কোন গাছের ফল?
বলবৎ যতই হোক
কিছুকিছু আইন এনকাউন্টারের মতই ভয়ংকর।
খ্যাতির বিড়ম্বনা
এ এমন একটি রোগ
একটু একটু করে বেশিরভাগ জীবনই একলা করে দেয়।
আজ যাকে অবিচ্ছেদ্য ভাবছো
কাল সে তো নাও থাকতে পারে।
এই আমাদের এক দোষ।
বুঝতেই পারি না
ওপরে ওঠার নেশায়, নিজের অজান্তেই মাটি থেকে পা সরে যায়।
যশ এবং অস্থিরতা আদপেই এক সরল রেখার দুটি দিক
পরস্পর বিপরীত মুখী, কখনও সহাবস্থান জানে না।
ফেরিওয়ালা
রাতবিরেতের ঘুমহীন পথে শূন্যতা আঁকলে
তুমি ভাবো ছলনা -
আমি অন্ধকারের নদী সাঁতরে
প্রাণপণে টেনে তুলি অরণ্য।
তুমি প্রেম দিলে -
আমিও নিষ্ঠুর প্রেমিক
নোনা জলে ছিটিয়ে দিই উৎপীড়ন
আমি যে ফেরিওয়ালা -
স্বপ্ন ফেরি করাই আমার কাজ।