মণিশংকর বিশ্বাস
প্রতিবন্ধী
রণিত রায় একজন প্রতিবন্ধী!
না, রণিতের কোনো প্রতিবন্ধী কার্ড নেই
কিন্তু সমস্যাটা হল, রাস্তায় বেরুলেই রণিত তাল তাল মাংস দেখে
কাটা শশার মতো পিচ্ছিল সব মাংস
নিজেকে তখন তার রোদের ভিতর ঘুরে বেড়ানো
একটা কচি শিশ্ন মনে হয়
সবচে কঠিন লাগে
যখন দ্যাখে ওর জন্য কোনো লেখক, কবি, শিল্পী
বুদ্ধিজীবী, ফিল্মমেকার, ধর্মযাযক—
সভ্যতার তরফ থেকে কেউ নেই
কারো কোনো সহানুভূতি নেই ওর জন্য!
কেউ মানতেই চায় না রণিত প্রতিবন্ধী
রণিত জানে, মানুষের সব জিভ বা সব অসুস্থতা
দৃশ্যমান নয়
সহানুভূতিযোগ্য নয়
অর্গ্যাজম
শাল্মলী তোমার মুখের দিকে তাকালে
তোমার মুখের স্বাদ হতে বড় সাধ হয়—
মনে হয় আপেল হই, আমাকে কামড়ে
মিষ্টি রসে ভরে যাক তোমার মুখ
তোমার তৃপ্তির নাভীকেন্দ্রে আমি প্রবেশ করি
শাদা শাদা ফুলে, ফুলের ভিতর ওই রেণু
ওইখানে বেণু হয়ে বাজি…
ব্যায়াম
দোতালার জানালা দিয়ে বৃদ্ধ অথর্ব পঙ্গু সুবিমল চৌধুরী
পাশের বাড়ির বাপ্পাকে রোজ এক তলার ছাদে শারীরিক কসরত করতে দেখেন
প্রতিদিন সকালে বাপ্পা লোহা তোলে, ডন বৈঠক দেয়, তারপর
একটা বিশাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পেশি নাচায়
যেন এক অদৃশ্য দেহ সৌষ্ঠব প্রদর্শনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সে এসব করছে।
গতকাল বিকেলে বাপ্পা চলন্ত ট্রেন থেকে ঝুলতে ঝুলতে
পোস্টে বাড়ি খেয়ে এখন রেলহাসপাতালের মর্গে শুয়ে আছে
ক্ষীণস্বাস্থ্য সুবিমল আজ সকালে বিষাদঘন নাতনী টুপুরের মুখে খবরটা পেতেই
বাপ্পাদের ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন
বাপ্পার কালো মেঘের মতো শরীর, এতদিনকার ব্যায়াম
এতদিন ধরে তৈরি বাপ্পার বাইসেপস ট্রাইসেপস ইত্যাদি
কেমন এক মুহূর্তে বাষ্প হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে…
বিভ্রম
সুগন্ধী বিক্রেতা মেয়েটিকে সুগন্ধী মনে হয়
আমজনতা
বিল্টু বাবুর মা সব শোক ভুলে গিয়ে ভাবছেন, এবার তার বৌমা
নিশ্চয়ই অকথ্য কথা শোনাবে, যাতা ব্যাবহার করবে
বিল্টুবাবুর স্ত্রী এখন অনেকটা সামলে উঠে ভাবছেন, পেনশনের টাকায়…
তাছাড়া শরীরের রোগব্যাধি ছাড়া বাকি যে কারেন্টটুকু—
জন্মের মতো সব ভুলে যেতে হবে
ছেলে ভাবছে, এমবিএটা করা হবে না
রিতুর সঙ্গে সাহেবগঞ্জের ট্যুরও ক্যান্সেল করতে হবে
বিল্টু বাবুর আদরের মেয়ে স্বাতীলেখাও ঠিক করে নিল
এখন বেশ কিছুদিন আর শর্টস ও রিল বানাবে না
শুধু বছর দশেক আগে কেনা
বাটিকের জীর্ণ শার্টটা ভাবল,
“ভাবতে পারছি না, বাবু আমাকে আর পরবেন না!”
সৌজন্য
সৎকার সমিতির কর্মচারী, কাজটা পেয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন মৃতের আত্মীয়দের