বাপ্পাদিত্য রায় বিশ্বাস
প্রেত
আর কাউকে বাড়িতে ডাকি না
জানলার কপাট বহুদিন হলো চুরি হয়ে গেছে
গেটখানা হাটখোলা পড়ে থাকে দিনরাত
বাগানের বেড়া...ভেঙে গেছে চৈত্রের ঝড়ে
একটা ঘরেও কোনো বাতি নেই
মেঝে জুড়ে শুকনো পাতারা এসে ধুলো সাঁতরায়
কতদিন হয়ে গেল চৌকোনা ঘাস বেছে শুয়ে বসে আছি
ডাকবাক্সের কাঠ নতুন ঠিকানা গায়ে রোদ মাখে অচেনা শহরে।
পোড়ামাটি
মোমের পুতুল নিয়ে খেলার বয়সগুলো পার হয়ে গেছে
অথবা দেশলাই কাঠি ঘষে ফুটন্ত রক্তের চেনা পদ্ধতি
নদীতে আগুন জ্বেলে এতটা রাস্তা যারা তিরবেগে এল
ডাঙার ফিরতি পথে হেঁটে হেঁটে কবে আর ঘর খুঁজে পাবে
জলা ভেঙে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে জাগে দেবায়ন চূড়া
মুগ্ধতা চোখে ঢেলে স্মরণ করিয়ে দেয় বেঁচে থাকাথাকি
বিগ্রহ নেই ঘরে তবু ঘোর উপাসনা বুক ঠেলে ওঠে
চায় যেন আঁচলের রেশটুকু চোখে পড়ে ছাই উড়ে গেলে
বাস্তব
পাড়ের ভাঙনে বসে
আমরা দিনরাত আলোচনা করেছি
কে আসবে আর কে আসবে না।
আগের রাতে যার আসার কথা ছিল
তার নাম কাগজে লিখে, রেখেছি না-আসার বাক্সতে,
পরের রাতে যে পৌঁছবে বলেছে
তার নাম লিখে ভরে ফেলেছি আশার কৌটোয়।
অনেকদিন পর সবকিছু উপুড় করে দেখলাম...
প্রতিটা নাম আমাদের দুবার করে লেখা হয়ে গেছে।
কুহু হায়
যে উঠোনে ঘুঘুদের শ্রেয় মনে হতো
তার পাশ থেকে সুতীক্ষ্ণ নেমে এলো সুর
দুপুরের দহনের ক্লান্তিকে ছিঁড়ে
বসন্ত এভাবেই করে বসে ভুল?
আমাদের মত সেও দগ্ধ একাকী
ভুলে গেছে দিন যায়, " ফিরে নাহি চায় "
তবুও হঠাৎ ডেকে গতি বিপরীতে
কখনো বিলম্বিত করেছে বিদায়...
রঙিন ভুল
সকাল থেকে যাচ্ছি তুলে
শাপলা ফুল
গলুই জুড়ে ক'জন বসে
পাঁচ পুকুরে বেবাক তুলে
যাচ্ছি ফুল
সবুজ পাতা লালচে ডাঁটি
বাতাস যেন শীতল-পাটি
কোন সকালে বেরিয়ে খুঁজি
শাপলা ফুল
দুপুর কাটে পদ্ম বনে
সাপের কথা ভ্রমর শোনে
সন্ধে হলে দু হাত জুড়ে
রঙিন ভুল
গলুই ভরা দুরন্ত সব
শাপলা ফুল!