গুচ্ছ কবিতা - পঙ্কজকুমার বড়াল

পঙ্কজকুমার বড়াল
ছেঁড়া পৃষ্ঠা 

যেন শিশু আপন খেয়ালে
মুছে ফেলছে গাছ, ফুল, পাখি
মুছতে মুছতে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে গেছে
শিশু কাঁদছে
বাবা নেই, মা গিয়েছে কাঠ আনতে বনে
ঘুম এসেছে, ঘুমের ভিতরেও—
                   ছেঁড়া পৃষ্ঠা হা করে আছে ।


নির্ঘুম

অনিদ্রা বুকে নিয়ে বসে আছি বলে
এই রাত 
হরিণের পোশাক খুলে 
নেচে উঠল ঘোর রবে 
দন্ত-নখর-জিভে তাড়কা রাক্ষসী

তাকে বলি— প্রেম দাও

লক্ষণরেখার থেকে দূরে
বাইসন অন্ধকারে 
সে আমাকে চাঁদ নিয়ে ডাকে।


হেমন্ত

তুমি খুব ভুল
এই কথা লিখে রেখে
ঝরে গেছে ফুল

কে ভুল?
কে ভুল?
বলে উড়ে যায় পাখি

মৃদু-মন্দ হাওয়া বয়
পাতা খসে— হেমন্তে, একাকী।


বিষাদমঙ্গল

এইসব বিষাদ পেরিয়ে
একদিন কোথায় যেন যাবার কথা ছিল 
বোবা ভাষ্যের সাদা লিপি ছাড়িয়ে
আরও কি গহীন কোনো বিষাদের বন ডেকেছিল?
কীজানি! 
অন্ধকারের পাশে কোথাও ফুটেছিল 
হয়তো বা গাঢ় অন্ধকার 

আমাদের কলোনীতে ইদানিং কিছু সুখ উদ্বাস্তু হয়েছে 
তাদের মুখে দেখি আমার আত্মীয় বসতি  
তাদের কাছে ডাকি, বলি— কোথাও যাবার আছে? 
আমরা কি প্রকৃতই কোনো দিন যাই কি কোথাও! 

নিরুত্তর ভেসে আসে 
দুপায়ের নিচে এক নিশ্চল পৃথিবী
                              হঠাৎ ঘুরতে থাকে 
বলে— নিজের ভিতরে দেখো
যে কোনো ঘুর্ণন আসলেই স্থির এক বিষাদমঙ্গল ।


সরণ

বুকের বোতাম খুলে দিলে 
পোষাকের গাম্ভীর্য অংশত মিথ্যা হয়ে যায় 
যে বলে এমন কথা, তাকে— 
ছত্রিশ ও বিয়াল্লিশ দিয়ে গুণ করি 
গুণফলের ঘরে লিখি— 
পোষাক এক আদ্যোপান্ত ভাণ 
মানুষ উলঙ্গ হলে বোতামের সাথে 
আলোর কৌণিক বিন্দু শূন্যের সমান।




Author Photo

পঙ্কজকুমার বড়াল

পঙ্কজকুমার বড়াল একজন কবি এবং লেখক যিনি তাঁর চারপাশের বিশ্ব থেকে অনুপ্রাণিত। তার কাজ জীবন, প্রেম এবং মানুষের অবস্থা সম্পর্কে কৌতূহলকে প্রতিফলিত করে।

Post a Comment

যোগাযোগ ফর্ম