ঋজুরেখ চক্রবর্তী
পাতা
যে হাওয়া অস্থির হয় অকারণে,
যে বাতাস বয়ে যায় ইতস্তত এদিক ওদিক,
অভিজ্ঞতা থেকে জানে
ঝরে পড়া পাতাদের সাহচর্য নিয়তিসঙ্গত।
ভ্রমণসূচির কোনও দায় নেই বলে যার
নেই রম্যরচনার সাধু অধিকার।
কুমারী কাগজ তার যাবতীয় একাকিত্ব নিয়ে
হাওয়ার প্রশ্রয়ে নিজে ভাঁজে ভাঁজে ভেঙে যেতে পারে,
যাতে তাকে জ্বালানি হতে না হয় রন্ধনকলার স্বমেহনে─
এই তার একমাত্র শেষ অহমিকা,
এই তার প্রার্থনারও শেষ।
দূরে যে আগুন জ্বলে পাহাড়ের সরু বাঁকটিতে,
তাকে ঘিরে থাকা কোনও শীতশরীরের
এটুকুও সাশ্রয়চেতনা আর অবশিষ্ট নেই,
নেই এত প্রাজ্ঞ অহমিকা।
পাহাড়ের বাঁকটুকু পার হলে তারপর অমরত্ব আছে?
লজ্জা
যে হাত বিষের কৌটো লুকিয়ে রেখেছে নিজ আস্তিনের নিচে,
যে অহং লজ্জা লেখে নিজের শিয়রে,
যে মোহনবাঁশি জানে এক রাগিণীর বেশি আয়ু নেই তার,
নিবিড় কলহমায়া এ সকল উপাদানে গড়া।
কখনও বিজয়রথ অশ্বমেধ যজ্ঞমতে ফসলের মাঠ ছুঁয়ে যেত।
তারপর ছুট, ছুট, কী ভীষণ গতি সেই ক্ষাত্র অনন্যের!
দিগন্ত যেখানে খুব পিছোতে পিছোতে
অনন্তের ঢাল বেয়ে পচা পাতা শেকড়বাকড় ছিঁড়ে ঠেলে
সমূহ সঞ্চয় আর অপচয় পাশাপাশি নিয়ে
ক্ষুব্ধ সুখে অনিবার্য গড়ায় হেমন্ত অনুগামী,
সেখানে নির্জনতম বিরহিণী নামে এক হ্রদ বাস করে।
প্রকৃত কলহ জানে সেও এক নিভৃত মৈথুন অভিমান,
যেখানে অহং ছাড়া আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই নশ্বরের।
ভূমিতে প্রোথিত রথচক্র তার, এই স্বপ্ন রমণেরই পরম রূপক!
চিঠি
নিঃস্ব নিভৃত অগতিজড়িত এক দুপুর─
একটা পুরনো আধছেঁড়া চিঠি,
তাতে কারুর বুকের ঘামের শুকিয়ে যাওয়া দাগ।
ব্যস, এইটুকুই তো!
বাকিটা বানানো।
বাকিটা অনন্ত নির্মাণের ধারাবাহিকতা।
বাকিটা অভ্যাস।
রূপ
ঈশ্বরের হাতে গড়া
সুন্দরের সপ্রাণ ভাস্কর্য দুই চোখ ভরে দেখে
ডুকরে ওঠা কান্না আসে নশ্বরের মনে।
আপাততুচ্ছ এই কথাকটি ছন্দের আশ্রয় দাবি করে।
অক্ষরবৃত্তের ভীরু ভানটুকু ছাড়া
উপরোক্ত স্বীকারোক্তি ব্যক্তিগত চিঠি হয়ে যেত।