গৌতম সমাজদার
সুন্দরী বউ
মনি,মনি দৌড়ে আয়, দেখ তোর বাবা বাজার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কেমন করছে।
- বাবা,ও বাবা তোমার কি কষ্ট হচ্ছে,বল না? দাদা, সবাই মিলে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দে। কাকা তুমি তন্ময় ডাক্তারকে খবর দাও।
- মা-রে বুকে খুব ব্যাথা হচ্ছে,গোঙ্গঁরানো গলায় বলল,যা কেউই বুঝতে পারত না, যদি না বাঁ বুকটা হাত দিয়ে দেখাত।
- রিকশাওয়ালা দাদা, বিপুলদা তোমরাতো কষ্ট করে নিয়ে এসেছো,কি হয়েছিল?
- হঠাৎ করে ফুটপাতে বসে পড়েছিল, তারপর হাত দিয়ে বাঁ বুকটা চেপে শুয়ে পড়েছিল।
- কিন্তু বাবারতো তেমন কোন অসুখ ছিল না, হ্যাঁ মাঝেমধ্যে Pressure টা একটু ওঠানামা করত, একটাই Tablet খেত।
বলতে বলতে ডাক্তারও চলে এল, বলল আমি এখনকার মতো Medicine দিচ্ছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব Admission করতে হবে, Case of cardiologist, দেরি করলে ক্ষতি হতে পারে। মনি কাকা দাদা Ambulance করে Nursing Home নিয়ে গেল, সেই থেকে মনি বাবার মাথার কাছে বসে, একবারের জন্যও নড়েনি, Treatment ও শুরু হয়ে গেল, কত রকম নল সারা শরীরে, খুব মন খারাপ হয়ে গেল মনির, চোখে জল এসে গেল, রাতে বাড়িতে খেতে যাবার সময় বলল, বাবা তোমাকে ঠিক বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব।
দিন সাতেক বাদে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেল ঠিকই, তবে তখন ওর বাবা কোথায়, ডাক্তার বললেন ভগবানই ভরসা, ১৫ দিন বেঁচে ছিলেন, দিনরাত এক করে মনি বাবার পাশে থাকল, ভয় ঘুমাতে যেতে পারিনি, তারপর সব শেষ, বাবার বুকে মাথা রেখে মনির সে কি-কান্না! বুঝলো পিতৃহারা মানে কি। মনি কোনদিনও বাবা কে পছন্দ করত না, বড্ড বেশি কড়া ধাতের মানুষ! একরোখা। মনে অনুভব করতে শুরু করলো ওর জীবনের ঝড় নেমে আসবে, হল ও ঠিক তাই। সব মিটে গেলে কাকা বলল "দাদা রেখে যাওয়া কাজটা এবার করে ফেলতে হবে" মনি বলল "কি কাজ?" "কেন তোর বিয়েটা দেওয়া" -কাকা বলল। মনি বললো এখন শোক কাটিয়ে উঠতে পারলাম না, কি সব বলছ?
- আরে দেখাশোনা করতে করতেই সময় চলে যাবে, আর তুই তো কোন অপ্সরা নয়, যে এক দেখাতেই বিয়ে হয়ে যাবে।
- না না আমি এখন বিয়ে করবো না, কিছুতেই না।
- কেন করবি না, বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে, সমথ্থ মেয়ে বাবা নেই, এছাড়া উপায় কী? মা বলল।
- মা, তুমিও বলছ? আমি অবাক হচ্ছি। বিয়ে আমি এক্ষুনি করব না।
মনি, নিজের প্রিয় বারান্দায় চলে গেল, কত স্মৃতি আছে বাবার সাথে, বাবার সেই আমার কাছ থেকে গান শুনতে চাওয়া, বাবার উদার কন্ঠে আবৃত্তি,কখনো কখনো বাবার সেই স্নেহের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা -সেই মিষ্টি দিন হল আজ স্মৃতি। আবার ভাবনা উজ্জ্বল চলে এল, ঝকঝকে ছেলে গবেষণা করছে চাকরি কবে যে করবে! ওর চাকরীর বোধহয় ইচ্ছেও নেই, গবেষণায় করতে চায়। বলতে নেই বড্ড ভালো ছেলে, কলেজে যেদিন প্রস্তাব করেছিল, সেই দিনই ওর প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলাম, অবশ্য মুখে বলেছিলাম ভেবে দেখব। কলেজ Social এ আমি গান করেছিলাম, তাথেকেই পরিচিত। উজ্জ্বল মাঝেমাঝেই বলতো, আমি নাকি কলেজে সেরা সুন্দরী, আমি বলতাম তুমি সুন্দর মন নিয়ে আমায় দেখো, তাই আমি সুন্দরী,মনে পরে একদিন উজ্জ্বল মন খারাপ করে দাঁতে নখ কাঁটছে, বেশ গম্ভীর, আমি বললাম কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? কোন উত্তর দেয় না, এবার ওর হাতটা টেনে নিয়ে হাতে চুমু খাওয়াতে নরম হলো বলল, "সব ঠিক হচ্ছে তুমি আমার, তুমি সুন্দরী, ইচ্ছে করলেই মডেল হতে পারতে টপ, জিন্স, আবার শাড়িতেও তোমায় ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু তোমার এইসব ছবি Facebook এ না দিলেই নয়? এটা আমার ভালো লাগেনা। নিজেকে এত Public করো না, তুমি শুধুই আমার ভালোবাসা" আমি বললাম, "ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে, কথা দিলাম আর হবেনা", একটু থেমে বললাম, উজ্জল একটা কথা বলি,"বাবা চলে গেল, কাকা সুবিধার নয়, উঠে পড়ে লেগেছে বিয়ে দিয়ে আমায় বিদায় দিতে, তুমি কি ভাবছ বল? তুমি একদিন আমাদের বাড়িতে চল, প্রস্তাবটা দাও," উজ্জ্বল বলল, "ঠিক আছে যাবো।"
রাতে খাবার টেবিলে কাকা বলল, "একজন ভাল সম্ভ্রান্ত পাত্রের সন্ধান পেয়েছি, Chartered Accountant, খুব বনেদি পরিবার, আমাদের সাথে মানানসই, মনি তোমার কিছু বলার থাকলে বল।" আমি বললাম, " মা আমি একজনকে ভালোবাসি, মা-কাকা একত্রে বললো তাহলে বাড়িতে আসতে বল," উজ্জ্বলকে ফোন করতে, বলল আসবে। এদিকে আমার আবার নাটক করার শখ আছে, চন্দনদা নির্দেশনা বেশকিছু Show ও করেছি, চন্দন দার মত নাটক পাগল মানুষ আমি দেখিনি, নাটকের জন্য সব দিতে প্রস্তুত, বিয়েটা পর্যন্ত করলো না। চন্দনদা যেমন কবিতা লেখে, নাটক লেখে নির্দেশনাও বেশ উঁচু মানের। ওনার নাটক পশ্চিমবাংলায় একটা জায়গা করে নিয়েছে, কত আর বয়স হবে ৩২ হবে, এত কম বয়সে বিশ্বনাটকের এত খবর রাখা মানুষ দেখিনি। আমায় বলতো মনিতর অভিনয়ের জন্য Group টা দাড়িয়ে গেল। আমি বলতাম কি যে বলো চন্দনদা! তোমার লেখা, নির্দেশনার জন্যই আজ আমরা এ জায়গায়। জানিস মনি, নাটকের মধ্য দিয়ে আমি জীবনের কথাই বারে বারে বলতে চেয়েছি, হাজার হাজার বক্তৃতায় যা হয়না, একটা নাটকে তার চেয়ে বেশি কাজ হয়, ওই, ঠাকুর যাকে বলেছিলাম, "লোক শিক্ষো হয়" নাটক মানুষ নিলে বড় তৃপ্ত হই। এ যে কি আনন্দ, বলে বোঝানো যাবে না, যাই হোক বল, তুই কেমন আছিস, নাটকটা ছাড়িস না।
পরদিন বিকেলে উজ্জ্বল এলো, বাড়ির সবাই আছে, কাকা লেখাপড়ার কথা বলায় তাই বলল, "তা কত রোজগার করছে বাপু?"
- চাকরি তো করি না, একটা Scholarship এ গবেষণা করছি।
- ও হো! তাহলে মনিকে বিয়ের ভাবনা বাদ দাও। মনির সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ রেখো না, শুনছো হে খোকা - কাকা বলল।
- মনি তুই কি করবি, উজ্জলের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল, Chartered পাত্রই তাহলে Final করে ফেলি, মা বলল।
উজ্জলের এই অপমানের মনের চোখের জল ছাড়া আর কিছুই নেই, মনি বললো, চলো উজ্জ্বল, এখানে বসে থাকার কোন মানে নেই।
এরপর মনের সমস্ত ইচ্ছেকে ধুলিস্যাৎ করে বিয়ে দিয়েছিল, সব কষ্ট মেনে নিয়ে অভিজিৎকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করল, নিজেকে বোঝাল এদেশের মেয়েদের আজও মুখ বুজে সব মেনে নিতে হয়। পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে। প্রথম কয়েক দিন মনে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল, বয়সের অনেকটাই পার্থক্য থাকায় আর অভিজিৎ গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় বন্ধুত্বটা ঠিক হলো না। মনি, ভালো নাম ঝর্ণা, ঝরনার মতো বয়ে চলা এক নরম নদী। Facebook, WhatsApp এই সময় কাটে, একদিন অভিজিৎ অফিস থেকে ফিরে এসেই বলল বন্ধুরা বলছে তুমি নাকি Model এর মত দেখতে, আমি কিন্তু তোমার ওই Model এর মতো জামা কাপড় পরা মেনে নিতে পারছিনা, একটু সংযত আর সতর্ক হও। একদিন বন্ধুরা দলবেঁধে এল। খাওয়া-দাওয়া করলো তারপর বন্ধু অভিজিৎকে বলল, "তুই অনেক ভাগ্য করে এত সুন্দরী ভালো বউ পেয়েছিস" ব্যাস! সেদিন রাতে যা মুখে এলো মনিকে বলল। মনি শুধু বলল, "এতে আমার দোষ কোথায়?"তাতে আরোও বাক্যবাণে নিষ্পোষিত হলো মনি।
অভিজিৎ নাকি একদিন অফিসে ঢুকে Room এ খাচ্ছে, দেখছে অফিস কর্মীরা মিলে মোবাইল খুলে Facebook দেখছে। ওর কানে এল, "অপরূপা, অভিজিৎ তার সঙ্গে বয়সের অনেক ফারাক, সত্যিই অভিজিৎদা ভাগ্যবান" রাতে বাড়িতে ফিরে ক্ষোভে রাগে ফেটে পরল, বলল, "তুমি Facebook delete করো, তুমি বাড়ি থেকে একদম বেরোবে না, ঘরে কাউকে আসতে দেবে না, যদি কথা না শুনো তাহলে ঘরে তালা মেরে অফিস যেতে হবে আমায়!"
তারপরের দিন মনি সারাদিন কাঁদলো বালিশে মুখ গুঁজে, ভাবতেও এইগুলোতে তো ওর কোন হাত নেই, তবু কেন সংসারটা এভাবে নষ্ট হচ্ছে, কেন জীবনটা এইরকম কঠিন হচ্ছে! উজ্জলের খবরটাও অভিজিৎ জেনে ফেলেছিল, তা নিয়েও প্রায়ই অশান্তি হত। অভিজিৎ এমনিতে মানুষটা খারাপ ছিল না ভালোবাসতো। খাওয়া-দাওয়ায় ও যথেষ্ট নজর ছিল, আমি ফল খেতে ভালোবাসি বলে ব্যাগ ভরে ফলা আনতো। কিন্তু মনে চাইতো আধুনিক পোশাক পরতে, কিন্তু অভিজিৎ শাড়ি বাদে অন্যকিছু পড়লেই অশান্তি করত, বাড়িতে পড়লে তবুও একটু আধটু মেনে নিত, কিন্তু বাইরে কিছুতেই না, মনি শাড়ি পড়তে একদমই পছন্দ করত না, কোন কারনেই Shopping বা Mall যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, একদম নাপসন্দ।দেখতে দেখতে মেনে নিতে নিতেই একমাত্র সন্তান মেঘমালা এখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। অনেক অশান্তির মধ্যে দিয়ে মেঘমালাকে English Medium school এ
পড়িয়েছে, মেঘমালা বাবাকে খুব সামলে চলে, যতো আবদার মা-র কাছে। কিন্তু মা-তো সবকিছু পেরে ওঠে না। ইদানিং মেঘমালাকে পড়াতে আসে অল্পবয়সী এক মাস্টার। তাকে নিয়েও সন্দেহ অভিজিৎ এর। একদিন বলে, "মেঘা, তুই Coaching এ ভর্তি হ। তাতে অনেকের সঙ্গে পড়লে Competition টাও ভালো হবে, মাস্টারমশাই এর বাড়িতে আসার দরকার নেই।" মনি অবাক হয়ে যায় এভাবে মানুষটার Counselling হওয়ার দরকার, Psycriatric দেখানো দরকার। কিন্তু একথা বলার সাহস নেই মনির। মানুষটার জন্য কষ্ট অনুভব করে। মন থেকেই ভালোবাসে। স্ত্রী হিসাবে যা করা উচিত সবটাই করে, অসুস্থ হলেও বসে থাকে মাথার কাছে। তবে সত্যি কথা বলতে কি একজন স্ত্রী তো শুধু ঘর, খাওয়া-দাওয়া, নিরাপত্তাই চায়না, চায় গভীর বন্ধুত্ব, চায়ে আদরের ছোঁয়া, প্রবল আবেগ, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা, মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে বুকে টেনে নেওয়া, ...ভেসে যাওয়া। কিন্তু খুব বেশি বয়সের পার্থক্য বলে কিনা জানেনা, অভিজিৎ এর আজ আর সে ব্যাপারে কোনো উৎসাহ নেই, আজ কেন কোনো কালেই ছিলনা, মনির রাতগুলো কাটে চরম নিদ্রাহীনতায়, ভীষণ কষ্টে, এই না পাওয়ার যন্ত্রনা ধীরে ধীরে মনিকে কুড়ে কুড়ে খায়, অযোধ্যা মেজাজ হারাচ্ছে, অন্যায়ভাবে মেয়ের সাথে ও খারাপ ব্যবহার করে ফেলছে। কিন্তু মনি তার সবটুকুই দিয়েই আজও অভিজিৎ কে ভালোবাসে, এত কষ্টের পর বিশ্বাসহীনতার কাজ করতে মন চায় না। কবে হাঁপিয়ে ওঠে এই বদ্ধ জীবন নিয়ে, তবে মেয়েটাই ওর জীবনের খোলা আকাশ, বেঁচে থাকার মানে, এরই মধ্যে একদিন অভিজিৎ কে বলল, "এই শোনো, তোমার সাথে না কথা আছে, কবে বসবে?"
- এখনি বল।
- আচ্ছা বলত, আমার সঙ্গে তুমি সবসময় খারাপ ব্যবহার কেন করো? আমার দোষটা কোথায়? আমিও তো একজন মানুষ, আমারও তো ভালোলাগা, খারাপলাগা আছে। আর মেয়েও তো বড় হয়ে গেল, অনেকগুলো বছর একসাথে কাটিয়ে দিলাম। এখনো আমাকে নিয়ে তোমার ভয়।"
- না না, কি যে বল সন্দেহ থাকলে কি এতগুলো বছর একসাথে থাকতে পারতাম! কবে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতাম।
- জন্য আমার মনে হয় তোমার Counselling দরকার।
- মানেটা কি? তুমি বলতে চাও আমি পাগল, Don't cross your limit.
- Counselling কি শুধু পাগলরা করায়?
এই Complicated যুগে বহু সুস্থ মানুষও Counselling করায়। অনেক চাপ কাটানোর জন্য।
- চুপ করো আর কোনদিন এই ধরনের কথা মুখে এনো না। তাহলে আমার থেকে কেউ খারাপ হবে না।
মনি বোঝে একগুঁয়ে মানুষ, নিজেকে সবজান্তা মনে করে। এই ধরনের মানুষদের পরিবর্তন করা যায় না। হাল ছেড়ে দিল।
এর মধ্যে একদিন Tv news এ প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন দাসগুপ্ত খুব অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই আছেন। কাজের হারুদা দেখভাল করে। হারু দাও মনির খুব পরিচিত মানুষ, যথেষ্ট বয়স হয়েছে, মনির মন খুব খারাপ হয়ে যায়, নাটকের মহড়ার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, দাদার স্নেহে নাটক শিখিয়েছে চন্দনদা, মনপাড়ে নাটকে মুহুমুহু হাততালি পড়ার কথা, ঠিক করে এরমধ্যে একদিন দুপুরে চন্দনদাকে দেখতে যাবে, অভিজিৎ কেও সেই কথা বলে।
সেদিনটা ছিল সোমবার, অভিজিৎ বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাড়াতাড়ি Lunch করে কিছু ফল নিয়ে চন্দনদার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল, গিয়েই দরজা নক করলেও কেউ দরজা খুললো না।কিছু সময় পরে চন্দনদা হাঁপাতে হাঁপাতে কোন রকমের লুঙ্গিটা জড়িয়ে, বোঝাই গেল স্নান করে বেরোলো, এসেই বলল হরুটা কখন ওষুধ আনতে গেছে, এখনো ফেরার নাম নেই, তুমি এই অবেলায় মনি, ফলটা রেখে মনি নিচু হয়ে প্রণাম করতে গেলেই, চন্দনদা ওকে দুইহাত ধরে উঠতে বলল, ঠিক সেই সময় অভিজিৎ সামনে এসে হাততালি দিয়ে বলল, "বা! বা! নাটকটা তো বেশ জমেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই তবে চলছে এই নাটক!" চন্দনদা গামছাটা ভালো করে জড়িয়ে ধরে বলল, "কি বলছেন অভিজিৎ বাবু, আপনি তো শিক্ষিত মানুষ! ও প্রণাম করতে, ওকে বারণ করলাম, ছিঃ!ছিঃ! এত নিচে নামতে পারে মানুষ!"
- বড় বড় কথা বলবেন না, আপনি ওকে জড়িয়ে ধরেননি, নাটকের লোকেদের এই অভ্যাস থাকে, সুযোগ পেয়েছেন, একা বাড়িতে, উপভোগ করছেন।
- অভি তুমি এসব নোংরা কথা আর বলো না, আমি আর নিতে পারছি না, চন্দন দা আমাদের নাটকের গুরু, তাই প্রণাম করছিলাম।
- চলো চলো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর রাধা কৃষ্ণের খেলা দেখাতে চাইনা, বাড়ি চলো মনি, তারপর মজা দেখাচ্ছি।
চোখের জল ফেলতে ফেলতে চন্দনদার কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে এল,এসেই নিজের জামাকাপড় আর ব্যক্তিগত কিছু জিনিস গুছিয়ে বাপের বাড়িতে যেতে উদ্যত হলে অভিজিৎ বলল, "কোথায় যাচ্ছ, দাড়াও কথা আছে।"
- বলে ফেলো, বল আরো নোংরা নোংরা কথা।
- হ্যাঁ আমারই ভুল, তখন সন্দেহের বশে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল, নিজেকে সংযত করতে পারিনি, পরে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলাম,অসুস্থ মানুষ নিশ্চয়ই স্নান করে বেরিয়ে এসেছিল, গায়ে জল দেখেছি, গামছা জড়ানো, ভুল আমার ক্ষমা করে দাও, আজ চলো আজ দুজনে মিলে Councellior এর কাছে যাই আমার সত্যিই Treatment করানো দরকার।