আহ্বান
গুমরে মরেছি শুধু মনের গভীরে
অস্ফুট আর্তিতে আর অপেক্ষায় অপেক্ষায়
বয়ে গেছে রক্তধারা এই যমুনায়।
রুধিরের স্রোত-জল বৃথা, সব বৃথা
অনেক মায়াবী রাত ঝলমলে দিন,
নিতান্ত নিষ্ফল তারা, অপুষ্পক স্মৃতি।
এখনও গোলাপবাগে আধফোটা কুঁড়ি,
ভ্রমরের স্পর্শ পেতে প্রচণ্ড উন্মুখ
প্রতীক্ষা,প্রতীক্ষা নিয়ে রাত ভোর জেগে
সরিয়ে রেখেছি পাশে বরমাল্য খানি।
তারার জন্মের পর তারার মৃত্যুতে,
চুপচাপ কাল স্রোতে বয়ে গেছে কাল
নিঝুম দুপুর থেকে ধূসর বিকেলে
অলিন্দে একাকী বসে দেখেছি জগত
লুকিয়ে রেখেছি কত চোরাবালি স্রোত
লুকিয়ে রেখেছি কত পক্ষবিধূনন।
আগ্নেয়গিরির সেই উদ্গিরণের মত
আজ আমি অভিসারী, রোমাঞ্চ পিয়াসী।
তুমি এসো,
মুগ্ধতার সে প্রাচীন আধিকার নিয়ে এসো,
রুদ্ধদ্বারে বার বার কর করাঘাত
তোমার উদ্ধত ফনায় আমাকে বিদ্ধ কর,
মুগ্ধ কর, কর শিহরিত, বাজিয়ে তোমার বীন
নিয়ে চল জ্যোৎস্নার মায়াবী জগতে।
তোমার ডানার স্বেদ বিন্দু
গড়িয়ে পড়ুক আমার ডানায়
কানায় কানায় উপচে উঠুক রসস্রোত
পিয়াসী তৃষ্ণার্ত বুকে ঢেলে দাও অমৃত তোমার...
আশ্রয়
সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার
ঘরে থাকার অভ্যাস
বাইরে আমি শুইনি কখনও
গায়ে লাগেনি শীতের কনকনে বাতাস
কিংবা বৃষ্টির ছাঁট।
কালবৈশাখী এলেও তার আঁচ
বুঝতে পারিনি কোনোদিন
সেই ছোট্টবেলা থেকে আমি আছি
নিশ্চিন্ত ছাতার তলায়।
বাবা হাড় জিরজিরে হয়ে গেছেন
চোখে পুরু চশমা, বুকে পেসমেকার
তবু ছাতাটি আছে হাতে তার
শক্ত,খুব শক্ত করে ধরা
সতর্ক দৃষ্টি তার চারদিকে
যেন কিছুতেই না ভেজে তার সন্তান।
আশার বাষ্প
মহামারী এসে জীবন কাড়ছে তবু
আমরা চেয়েছি গেয়ে যেতে সেই গান
শবের উপরে জমছে শবের স্তুপ,
কবরের পাশে বেঁচে ওঠে কিছু প্রাণ।
রাত্রির বুকে বাড়ছে আঁধার রোজই
ফুল তবু ফোটে শবদেহটার পাশে
চাঁদ নেই তবু দূরের আকাশে দেখ,
কিছু ছোট তারা আলো দেয়,ভালোবাসে।
মৃত্যু আসছে কাড়ছে মায়ের কোল
কত ভাবনারা আর তো পেল না ভাষা
বেশ কিছু ফুল অকালেই ঝরে গেল,
মৃত্যুর পরও থেকে যায় প্রত্যাশা।
দূরের তারার ক্ষীণকায় স্মিত আলো
সংকেতে বলে সংগ্রাম আছে বাকি
তারা খসে গেলে মৃত্যুর গান গেয়ে,
তখনও দেখবে ডাকছে ভোরের পাখি।
বীজ
যেভাবে তারার পাশে গ্রহে-গ্রহে জেগে ওঠে প্রাণ
জ্যোৎস্নার পরশ পেলে পাহাড়ও তো গেয়ে ওঠে গান।
আলো-জল-মাটি পেলে সেভাবেই বীজ জেগে ওঠে
হাজার বছর পরে দীঘি জুড়ে নীলপদ্ম ফোটে।
কত আশা, কত স্বপ্ন, কত ধৈর্যে সব চেপে রেখে
সময় সুযোগ পেলে ফুলে-ফলে ছবি দেয় এঁকে।
চতুর্দিকে অমানিশা, প্রাণঘাতী কত চক্রব্যূহ
লুকিয়ে ঘুমিয়ে থাকে চারাগাছ, গোটা মহীরুহ।
আধোআধো ঘুমে মোড়া রহস্য লুকিয়ে আছে কী যে
গোটা এক মহাকাব্য লেখা থাকে অতিক্ষুদ্র বীজে!
মৃত্যু
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কনডেনসারের মতো
পার্থিব জীবনে মৃত্যুও এক খুব প্রয়োজনীয় ক্ষতি।
নতুন মুখের শিশু, টাটকা গোলাপ
কিছুই থাকত না, মৃত্যু না থাকলে।
মৃত্যু না থাকলে আজ পৃথিবীটা ভরে যেত
বৃদ্ধ বৃদ্ধায় আর বৃদ্ধাশ্রমে।
ধর্ম
ধর্মকে আমি সেদিন মানবো যেদিন
মুসলমান শিশু খৎনা করা অবস্থাতেই জন্মাবে।
ধর্মকে আমি সেদিন মানবো যেদিন
হিন্দু শিশু টিকি নিয়ে জন্মাবে।
ধর্মকে আমি সেদিন মানবো যেদিন
দাড়ি শুধু মুসলমানদেরই গজাবে।
ধর্মকে আমি সেদিন মানবো যেদিন
রক্তের রঙ আলাদা হয়ে যাবে হিন্দু-মুসলমানের।
আমার শেষ যাত্রায় কোনও গীতা বা কোরান নয়,
কিছু আধুনিক বিজ্ঞানের বই দিও আমার সঙ্গে।
দুঃখ
ওগো দু:খ, তোমার জন্য দু:খ হচ্ছে খুব,
তুমিই ছিলে বন্ধু সখা, শত্রু ছিল সুখ।
মরলে আমি তখন তুমি কোথায় যাবে বলো?
দু:খ, তোমার দু:খে আমার দু'চোখ ছলোছলো।
বৃষ্টি
বৃষ্টি রে তুই মিষ্টি ভারি, তোর গলাতে সেই চেনা সুর!
ঘরের ছাদে গাছের পাতায়,বাজছে রে তোর পায়ের নূপুর!
বৃষ্টি কোথায় পেলি এ গান? বল্ না বৃষ্টি বল্ না আমায়,
একলা যখন কাঁদে এ মন, তোর গানে সেই কান্না থামায়।
বৃষ্টি রে তুই থাকিস কোথায়? আকাশপারে? মেঘের দেশে?
কী আছে সেই অচিন দেশে, বল্ না বৃষ্টি মিষ্টি হেসে।
টিপ-টিপ-টিপ বৃষ্টি রে তুই, ঝর না এখন অঝোর-ধারায়,
রিম-ঝিম-ঝিম নূপুর বাজে, তোর সুরে এই মনটা হারায়।
বৃষ্টি রে আর কেউ না বুঝুক, তুই তো বুঝিস মনটা আমার,
তোর সুরে আজ উঠছে বেজে, বাউলমনে ধ্রুপদ-ধামার।
মনটা যে চায়, যাই চলে যাই, তোর সাথে আজ অনেক দূরে -
নদী-পাহাড়-বন পেরিয়ে, নতুন দেশে, অচিনপুরে।
সেই দেশে এক দুঃখী মেয়ে, আমার মতোই একলা ভারি,
সবাই তাকে ভুল বুঝেছে, তার সাথে ভাই দিস্ না আড়ি।
রিম-ঝিম-ঝিম গানটা গেয়ে, আমার কথা বলবি তাকে,
মনে আমার কষ্ট কত, বুঝিয়ে দিস্ গানের ফাঁকে।
বৃষ্টি আমি সে দেশ যাব, রিম-ঝিম-ঝিম গানের সুরে
চল্ না বৃষ্টি চল্ না নিয়ে, সেই দেশে সেই অচিনপুরে...