বর্ণময় বাড়ৈ এর একগুচ্ছ কবিতা

বর্ণময়
পুনর্জন্ম

কী দিতে পারি নিজেকে
স্মৃতি ধুয়ে আনা জল অথবা সময়ের অভিসম্পাত?
একটা অতিকায় ত্রাস আমায় গিলতে এসে 
বারবার শাকাহারি সন্ত হয়ে যায়–
তবু পথ্য ভেবেই গিলে নেয়।
গিলে নিয়ে উগরে দেয়। 
আবার গেলে আবার উগরে দেয়–
এভাবে দ্বাদশীয় ঋতু পেরিয়ে 
অভুক্ত সে আমায় দিয়ে যায় পুনর্জন্ম...
এই জন্মটুকুই আমি নিজের হাতে দিয়ে বলি,
ভালো থাকার চেষ্টা কোরো,
অনন্ত অসুখের কাঁকড় থেকে খুঁটে নিও দু'একটি সুখের ধান...
২.
দিনান্তে, ঘাসরঙের পাখিটি 
আমায় পথ চিনিয়ে পৌঁছে দেয় বাড়ি। 
বাড়ি বলতে লেবু ঝোপের পাশে রুগ্ন খড়ের দালান
আসন্ন শীতের পথে চেয়ে–
আমি নতুন করে জন্ম নিই–
যদিও ঘরে ফেরার কথা ছিল না আমার!
আমি তো পথিক হতে চেয়েছি
অফুরন্ত মাঠের পথে কুড়িয়ে নিয়ে
দু'একটি বুনোফুলের সখ্য।
আমি তো নিখোঁজ স্মৃতির ভিতর থেকে
নম্র তারাটির মতো জ্বলতে চেয়েছি মিটমিট
তবু কে আমাকে প্রসব করছে জঠর যন্ত্রণায়
এই হরিৎ হেমন্তের পীত অপরাহ্নে ?
কে আমাকে খায়িয়ে দিয়ে শুভ্র ধানের দুধ
বাড়িয়ে দিচ্ছে জন্ম‌ঋণ?


সন্ধিক্ষণ

শত-সহস্রবার আয়না মুছে নেওয়ার পর‌ও
নিজেকে না দেখতে পাওয়ার যন্ত্রণা কী, 
তুমি তা জানো ?
ঋতু বদলের আলোর নিচে এসে 
এসব কথা জানতে চাইছি বলে বুঝে নিও 
এখন এক উপসংহারে কাছাকাছি এসে দাড়িয়েছি আমরা,
আমাদের হাতের উপর একখন্ড অশ্রুসিক্ত মলিন কাপড়;
আপাতত সেটুকু দিয়েই মুছে নিতে পারলে কাঁচ;
আমাদের পরবর্তী জন্ম দেখা যাবে...


চৌকাঠ

ঘর ও বাহিরের মাঝে দরজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জন্মদিন–
কে আসে, কে চলে যায়
তার পদচিহ্নের হিসাব লিখে রাখে চৌকাঠ–
উদাস জানালার আড়াল থেকে উঁকি দেয় গতজন্ম।
আমি তার মুঠো থেকে কুড়িয়ে এনেছি অপ্রাপ্তি,
আমি দেওয়াল ঘড়ি থেকে নিংড়ে নিয়েছি
সময়ের ছলনা অসময়ের চক্রান্ত!
যে চলে গেছে তার স্মৃতি, যে থেকে গেছে তার মায়া
পথের পান্ডুলিপি জুড়ে এঁকে দেয় সান্ত্বনা,
এঁকে দেয় নতুন পৃথিবীর দিকে অলিখ নির্বাণ...


কান্না পায়

এক টুকরো জন্ম নিয়ে এসেছে পাখিটি
এক টুকরো মৃত্যু নিয়ে এসেছে পাখিটি
মাঝে স্বল্পদৈর্ঘের জীবন
চঞ্চু বরাবর ক্ষীণ...
এই ক্ষীণ জীবনটুকুর জন্য‌ খুব কান্না পায় আমার।
খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয় ওই পাখিটির জন্য‌ও 
দুর্ভাগা পাখিটি 
এক চিলতে জীবনটিকে ঠুকরে নিতে শিখল না!


জাতিস্বর

তুমি সাপের মাথা থেকে চুরি যাওয়া মণি
জাদুঘরের আলো হয়ে বেঁচে আছো
আমি মুগ্ধ দর্শক
গতজন্মে শিরমণি হারিয়ে ফেলা সেই সাপ
মানুষজন্ম নিয়ে পুনরায় শিখছি ছোবল।
শিখছি রূপক ছায়ার দংশন!
কত কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে এমন। 
শিখছি, ভুলে যেতে...


ঘুড়ি

বাতাস চেয়েছে তাই উড়ছি। উড়ব আর‌ও অন্তহীন–
লাটাই গোটালে সুতো। ছিড়ব নিজেকে। হব উড্ডিন–
জীবন উড়ন্ত ঘুড়ি, জন্মের থেকে নেওয়া সামান্য ঋণ
সেসব ঋণের কথাই মনে করাচ্ছে এ তুচ্ছ জন্মদিন...




Author Photo

বর্ণময়

বর্ণময় বাড়ৈ-এর বাসস্থান চাকদহ, নদিয়া। বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় কবি, পেশায় অঙ্কণ শিক্ষক। বাংলা সাহিত্যে এম.এ, বি.এড। প্রকাশিত বই দুটি, প্রথম বই জোনাকি ফুলের পালকি এবং দ্বিতীয় বই প্রত্যন্তপুরুষ।

Post a Comment

যোগাযোগ ফর্ম